“আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে” তেমনি একটি ছোট নদী সোনাইছড়ি , যার পাশে“সোনাইছড়ি রাজ বিহার” এবং “সোনাইছড়ি গ্রাম” অবস্থিত। এটি চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনীয়া থানাধীন উত্তর ঘাটচেক
ইউনিয়নের ৫নং ওয়াডের অন্তভুক্ত। সোনাইছড়ি নদী এখানে এসে ইছামতি নদীতে শেষ হয় বিধায় নদীকে সম্মান দেখানোর জন্য এরূপ নামকরন করা হয় ।
রাজা ভূবন রায় কর্তৃক ১৮৯৮ সালে এ বিহার প্রতিষ্ঠিত
হয়। অবশ্য এ
নিয়ে মতদ্বৈত্যতা আছে। সুনীতি
রঞ্জন চাকমা’র মতে
১৮৮০ সালে “কালিন্দী রানী” এই
বিহারটি নির্মাণ করেন এবং এটি “কালিন্দী
রানী রাজ বিহার” নামে
পরিচিত ছিল,(সূত্রঃ- পৄষ্ঠাঃ ৪/“ধূতাঙ্গঁ ভান্তের ত্যাগময় জীবন
ও ধর্ম
ছায়া” )। পরে নাম পরিবর্তন করে “সোনাইছড়ি রাজ বিহার” রাখা
হয়। বিতর্ক
যাই হোক
, মহান বৌদ্ধধর্মের একটি বিহার
প্রতিষ্ঠিত
হয়েছে, যার
পেছনে ছয়টি
গ্রামের বিরাট
এক জনগোষ্ঠী সদ্ধর্ম চর্চা করবে- এটাই
মূল কথা।
এই ছয়গ্রামগুলো হলো-
সাহাব্দীনগর, জামপুকুর, কোকানীয়া, ভূবনের খীল,
বিহার পাড়া
এবং সোনাইছড়ি পূর্ব পাড়া।শত বছরের ইতিহাসে দেখা যায় যে , যাতায়তের অসুবিধার কারনে সাহাব্দীনগর গ্রামবাসীরা “সাহাব্দীনগর সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার” নামক একটি বৌদ্ধ
বিহার নির্মাণ করেন এবং তাতে ধর্ম
চর্চায় মনোনিবেশ করেন। পরবর্তীতে সোনাইছড়ি পূর্ব পাড়ার একাংশ কর্তৃক ২০০২ সালে “সোনাইছড়ি সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার” নামক আরেকটি বৌদ্ধ
বিহার নির্মাণ করে।
কাঁচা ইটের উপর
নির্মিত মাটির
বিহারটি খুবই
মনোরম ছিল।
মূল বিহারের চারপাশে অপূর্ব
কারুকাজ মণ্ডিত
থাম এবং
বারান্দা ছিল। যা রাজানগর রাজ বিহারের আদলে
নির্মিত। পোড়া মাটির নির্মিত হারবা দিয়ে ছাউনি ছিল । বিহারের
দক্ষিণ পাশে একটি পুকুর
ছিল। পুকুরটি ভরাট করে এখন
একটি সুদশ্য
ধর্মমঞ্চ তৈরি
করা হয়। পশ্চিমে একটি বড়
বোধিগাছ আছে।
বর্তমানে বোধিবৄক্ষ মূলের মন্দির
এবং পাশের
ভিক্ষু সীমা
ঘরটি সংস্কার করে আধুনিকায়ন করা
হয়েছে। বিহারের বড় বুদ্ধ
মূর্তিটি খুবই
সুন্দর এবং
মনোহর । এরকম
শৈল্পিক নিদর্শন খুব কম দেখা
যায়। দেয়ালে
পীচ বোডের উপর
অঙ্কিত বোধিগাছের ছবি, বুদ্ধের কঠোর
ধ্যান, সিবলী,
আনন্দ, অঙ্গুলিমালা এবং জাতকের
বিভিন্ন উপাখ্যানের ছবিগুলি এত নিখুত
ভাবে শিল্পী তার
তুলিতে ফুটিয়ে
তুলেছিলেন যে,
দেখলে জীবন্ত
প্রতিমূর্তি মনে
হতো। অন্তরে
ভক্তি আপনা
থেকেই জেগে
উঠত। আমরা
শিল্পী ব্রহ্মপদ আচায্যের নিকট কৃতজ্ঞ। পরবর্তীতে বিহার
পাকা করার
সময় ছবি
গুলি নষ্ট
হয়ে যায়।
আরেকটি বুদ্ধ
মূর্তি শুদ্ধানন্দ ভান্তে কতৄক নির্মিত। বর্তমানে নতুন একটি
বুদ্ধ মূর্তি
জ্ঞানবোধি (দিবানন্দ) ভান্তে ও বিহারাধ্যক্ষ সুনন্দ ভান্তের তত্তাবধানে থাইল্যান্ড থেকে আনা
হয় । এ দুজনই (শুদ্ধানন্দ ও দিবানন্দ)এই
বিহারে শ্রামণ্য জীবন শুরু করেন।

বাংলাদেশ বৌদ্ধদের পরমারাধ্য ধূতাঙ্গঁ ভান্তে
শ্রীমৎ শীলানন্দ মহাস্হবিরের জন্মভূমি এই গ্রামে এবং
এই বিহারেই ১৯৮৮ সালে শ্রীমৎলোকানন্দ মহাস্হবির ও শ্রীমৎধর্মসেন মহাস্হবিরের পরিচালনায় প্রব্রজ্জিত জীবন
শুরু করেন। এছাড়া
শ্রীমৎশাসনপ্রিয় ভিক্ষু, শ্রীমৎ শুদ্ধানন্দ ভিক্ষু, শ্রীমৎ প্রিয়ানন্দ, শ্রীমৎঅরূপানন্দ, শ্রীমৎশ্রদ্ধানন্দ, শ্রীমৎধর্মানন্দ , শ্রীমৎপ্রজ্ঞানন্দ , শ্রীমৎদিবানন্দ , শ্রীমৎরাহুলানন্দ সহ অনেকে
এ বিহারে
শ্রামণ্য জীবন
শুরু করেন
শ্রদ্ধেয় লোকানন্দ মহাস্হবিরের প্রচেষ্ঠায়। বিহারের পশ্চিম দিকে
বোধি মন্দিরের পাশে অত্র সোনাইছড়ি গ্রামের সন্তান শ্রীমৎ
বুদ্ধানন্দ স্হবিরের একটি স্মৃতি
মন্দির আছে। এ
গ্রামেরই আরেক জন বৌদ্ধ ভিক্ষু শ্রীমৎকল্যাণমিত্র (গৃহী নাম-সুগত বড়ুয়া)
ভারতের বিভিন্ন এলাকায় বৌদ্ধধর্ম প্রচার করে
শেষ জীবনে
গৌহাটি বৌদ্ধ বিহারে
অবস্হান কালীন
সময়ে দেহ
ত্যাগ করেন(সূত্রঃ-“ধর্মসেনাপতি” পৄষ্ঠাঃ১১৯)।
শ্রীমৎলোকানন্দ মহাস্হবিরের সময়ে
“সোনাইছড়ি রাজ বিহার”এর সংস্কার কাজ
শুরু হয়,
যা পরবর্তীতে ভেঙ্গে পূনঃনির্মাণ করা
হয়। বর্তমানের প্রাসাদোপম নান্দনিক বিশাল
হল ঘর
সমন্বিত আধুনিক
যে বিহারটি আমরা দেখতে পাই,
তা সৃষ্ঠিতে সেক্রেটারী সুকৃতি রঞ্জন
বড়ুয়া, বিহারাধ্যক্ষ শ্রীমৎ সুনন্দ ভিক্ষু
এবং গ্রামবাসীর কঠোর পরিশ্রমও অবদান
চিরস্মরণীয় হয়ে
থাকবে।
সোনাইছড়ি রাজ বিহার প্রাঙ্গনের আয়তন,
নির্মাণশৈলী, নান্দনিকতায় এটি রাঙ্গুনীয়ার অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ বিহার বললেও অত্যুক্তি হবে না।
“May All
Beings be Happy”
No comments:
Post a Comment