Sunday, 26 September 2021

ধুতাঙ্গ সাধক ভদন্ত শরণংকর থের মহােদয়ের আত্ম-মানবতাবাদী সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য, ধর্মপ্রচার ও মিশন....

 

ধুতাঙ্গ সাধক ভদন্ত শরণংকর থের মহােদয়ের আত্ম-মানবতাবাদী সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য, ধর্মপ্রচার ও মিশন....

শ্রী সুনয়নংকর ভিক্ষু।।
আবাসিক শিষ্য, জ্ঞানশরণ মহারণ্য, রাংগুনীয়া।
বাংলার বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতির নবজাগরণে , আত্মমানবতার সেবায় বর্তমান সময়ে বৌদ্ধদের মাঝে ধুতাঙ্গ ভান্তে, ধ্যানী- সাধক রূপে যার নাম বেশি উচ্চারিত তিনি হচ্ছেন বাংলার সাংঘিক পরিব্রাজক, মানবতাবাদী সংঘপুরােধা, সুদেশক, পরমারাধ্য ধুতাঙ্গ সাধক ভদন্ত শরণংকর থের মহােদয়। যিনি অল্প বয়সে আত্মশােধনের মাধ্যমে আত্মমুক্তি এবং ধর্মপ্রচারের মাধ্যমে পরহিত সাধন হিসেবে বেছে নিয়েছেন সন্ন্যাস জীবন। পায়ে হেঁটে বুদ্ধবাণী ধর্মপিপাসু নর-নারীর মাঝে দেশনায়, বক্তব্যে, আচরণে, চারিত্রিক মাধুর্যে চলেছেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, শহর থেকে নগরে। স্বপ্রতিভায় তিনি ত্যাগ, সাধনায়, প্রজ্ঞা, মহত্ত্ব দিয়ে আপামর বৌদ্ধ জনসাধারণের মধ্যে হয়েছেন জীবন্ত কিংবদন্তী।
রত্নগর্ভা চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার অন্তর্গত কর্ণফুলীর শাখা হালদা ও মগদাই বহমান নদী বিধৌত ইতিহাস, ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ সুপ্রাচীন বৌদ্ধ জনপদ মধ্যম মার্দাশা গ্রাম । এই গ্রাম অনেক পুণ্য পুরুষের জন্মগ্রহণে পুণ্যস্নাত । যার অতীত ঐতিহ্য অত্যন্ত গৌরবের। সেই জন্মতীর্থে ১৯৮৪ সালের ১৬ই আগষ্ট ধার্মিক পিতা দিলীপ বড়ুয়া ঔরষে পুণ্যবতী মাতা ডেজী বড়ুয়ার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি জন্মসূত্রে নগেন্দ্র মাস্টারের বাড়ীর সন্তান। অতঃপর জন্ম জন্মান্তরের অপরিহার্য উর্ধ্বমুখী শােভন সংস্কারের প্রবল আকর্ষণে উপযুক্ত বয়সে পদার্পন করার পর ২০০৪ সালের ২৪শে অক্টোবর সন্ন্যাস জীবন গ্রহণ করেন । তিনি পরিচিত হলেন আগারিক জীবন থেকে ভিক্ষু শরণংকর নামে ।
সন্ন্যাস জীবন হল উন্মুক্ত পাখির মতাে স্বাধীনভাবে ধর্মানুশীলন ও সকল প্রকার পারিবারিক বন্ধন মুক্ত একাকি বসবাস। যেখানে রয়েছে স্বর্গীয় সুখ ও প্রতিনিয়ত আত্মশোধনে পন্থা। কালের বিবর্তনে জগতের বহু পুণ্যবান, জ্ঞানী-গুণী, মহামনিষী এই অমৃত আস্বাদ গ্রহণ করে হয়েছেন স্মরণীয় ও বরণীয় । ভিক্ষু হওয়ার পর তিনি প্রথম ছয় বছর সাধারণ জীবন যাপন করলেও প্রতিনিয়ত কীভাবে একাকিত্ব হয়ে জ্ঞান লাভ করবেন সেই মানসিকতায় নির্জনতা খোঁজতেন । এভাবে ২০১১ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আধ্যাত্মিক জীবন অধিষ্ঠান গ্রহণ করে রাউজান , হাটহাজারী , রাঙ্গুনীয়া , বােয়ালখালী থানার বৌদ্ধপল্লীর প্রাচীন ১৮টি শ্মশানে একাকি বিচরণ করেন ।।
এরপর আরণ্যিক জীবনের আস্বাদ উপলদ্ধির জন্য ২০১২ সনে গহীন থেকে গহীনে ধ্যানময় জীবনচর্চার নিরিখে প্রবেশ করেন ওনারই সাধনপীঠ পুণ্যভূমি খ্যাত জ্ঞানশরণ মহারণ্যে। এটি রাঙ্গুনীয়া থানার পদুয়া ইউনিয়নের উত্তরে পাহাড়ী বনাঞ্চল অধুষিত বৌদ্ধজনপদ ফলাহারিয়া গ্রাম । যে গ্রামে অর্ধযুগ আগেও হিংস্র বন্য প্রাণীর ভয়ে বসতি মানুষের জনকোলাহল নীরব ছিল । জ্যোতিষ্মান ব্যক্তিদের পুণ্যজ্যোতি যেমন দিকে দিকে প্রসারিত হয় তেমনি কিছুদিনের মধ্যে এ গ্রামবাসী সহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগত দর্শনার্থীদের মনে ধৰ্মসংবেগ ও ধর্মাচরণের প্রবণতা বৃদ্ধি পায় । সেসময় সঠিক ধর্মাচরণের কারণে অনেক পরিবারে হঠাৎ পরিবর্তনতা ও ধর্মপ্রীতি অনুধাবণ হয় । আস্তে আস্তে বৌদ্ধ গ্রাম, সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের ধর্মাশীলনের মিলনমেলা সৃষ্টি হয় পূজনীয় ধুতাঙ্গ সাধক ভদন্ত শরণংকর থের মহােদয়ের ধ্যান কুঠির।
সেই স্রোতধারায় ২০১৪ সালে রাউজান, আবুরখীল গ্রামে, ২০১৫ সালে রাউজান, আধারমানিক গ্রামে থেরো অভিধা প্রদান, ২০১৬ সালে রাউজান, বৃহত্তর হোয়ারাপাড়া গ্রামে ও চট্টগ্রাম মহানগর রেলওয়ে পলােগ্রাউন্ড ময়দানে ২০১৭ সালে ধর্মদান করেন। সেই থেকে শুরু করেন দীর্ঘপদব্রজে গমনে ধর্মপ্রচারের ঐতিহাসিক অধ্যায়। ফেরার পথে পুজনীয় ভান্তে চট্টগ্রাম মহানগর হইতে চান্দগাঁও, বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া উপজেলার ৩০টির অধিক বৌদ্ধ গ্রামে পদার্পণ ও ধর্মপ্রচার করে পুনরায় ধ্যানকুঠিরে ফিরে আসেন।।
এভাবে আরো কিছু সময় পরে চলমান জীবনকে ধ্যানের উন্নত পর্যায়ে অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি করতে কিছু সময় একাকি নির্জনতায় বিভিন্ন শ্বাপদসংকুল, কণ্টকাকীর্ণ স্থানে বিচরণ করেন । এরইমধ্যে জ্ঞানশরণ মহারণ্য কিছু কিছু প্রকল্পকাজ শুরু হয়। সমবেত বন্দনা, দৈনন্দিন আহার সংগ্রহ, ধর্মদান, নির্জনে একাকী ধ্যানানুশীলন, উপদেশ প্রদান সহ বিভিন্ন আত্ম-মানবিক কাজের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হতে লাগল সন্ন্যাস জীবন। একসময় বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি ঢাকা অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক দানশীল ব্যক্তিত্ব বাবু স্বপন বড়য়া চৌধুরী মহােদয়ের প্রার্থনায় রাজধানী ঢাকা মহানগরে ধর্মপ্রচারের প্রার্থনা গ্রহণ করেন ।
চট্টগ্রাম, রাঙ্গুনীয়া থেকে যাত্রাকালে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি মহিলা কর্তৃক চট্টগ্রাম মহানগরস্থ, নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারে বিশ্রামের ব্যবস্থা করেন। সেখানে চট্টগ্রামের মাননীয় সিটি মেয়র জনাব আ.জ.ম নাসির উদ্দিন সাহেব প্রধান অতিথি ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশ ডি আই জি এস এম মুনিরুজ্জামান বিপিএম , সিপিএম মহােদয়ের বিশেষ অতিথিত্বে এক ধর্মসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন চট্টগ্রাম মহানগরের সহস্রাধিক বৌদ্ধ নর নারীর সমাগমে সিটি মেয়র ও ডি আই জি সাহেব ধর্মদেশনা শ্রবণ করেন ও পূজনীয় ভান্তের নিকট আশীর্বাদ গ্রহণ করেন । উল্লেখ্য ঢাকা মহানগরে গমনকালে বাংলাদেশ সরকারের সম্মানিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহােদয়ের সহযােগিতায় বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সেহেতু পুলিশ সহকারে চট্টগ্রাম থেকে রওনা হয়ে মিরসরাই থানায় গমন করেন। সেখানে মিরসরাই বৌদ্ধ অষ্টগ্রামের সমন্বয়ে দমদমা গ্রামে এক ধর্মসভার আয়ােজন করা হয় । সেখানে প্রধান অতিথি ইঞ্জিনিয়ার মােশাররফ হােসেন এমপি মহােদয়ের অনুমােদনে মাননীয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী জনাব মােঃ রাশেদ খান মেনন এমপি ও প্রধান পৃষ্টপােষক সাবেক শিল্পমন্ত্রী দানশীল ব্যক্তিত্ব বাবু দীলিপ বড়ুয়ার উপস্থিতিতে মিরসরাই , নিজামপুর পাহাড়ে প্রতিষ্ঠিত পূজনীয় ভান্তের ধ্যানকুঠির ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেন। সেসময় প্রধান পৃষ্টপােষক রূপে যাবতীয় অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী মহােদয়। সেখান থেকে বের হয়ে ফেনী , কুমিল্লা , নারায়নগঞ্জ হয়ে মাত্র ১৫ দিনে চট্টগ্রাম হতে ঢাকা মহানগরে সশিষ্য সেবক সহকারে প্রবেশ করেন। বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি ঢাকা অঞ্চল কর্তৃক আয়ােজিত ধর্মসভা ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে উত্তরা, বাংলাদেশ বৌদ্ধ মহাবিহার ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন প্রধান অতিথি হিসেবে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরিবর্তে উক্তদিন বাংলাদেশ দূতাবাস এর মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাননীয় মাসিয় বানিকেট ও থাইল্যান্ড এর রাষ্ট্রদূত পেনপিমন সোওয়ান্নাপােনাস মহােদয়া ধর্মানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। পূজনীয় ভান্তে ঢাকা মহানগরে সফলতার সহিত পদব্রজে ধর্মপ্রচার শেষ করে প্রত্যাবর্তন পথে নর্দা, কালাচাঁদপুর ও ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে বিশ্রাম ও দিনব্যাপী ধর্মানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। সেসময় বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয়গুরু মহামান্য ২৮তম সংঘনায়ক, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সংঘমনিষা, মানবতাবাদী, অনাথপিতা ভদন্ত শুদ্ধানন্দ মহাথের মহােদয়ের সান্নিধ্যে আশীর্বাদ গ্রহণ ও বিভিন্ন উপদেশাদি গ্রহণে আন্তরিক হৃদতা বিনিময় করে সপ্তাহকাল সেখানে অবস্থান ও ধর্মদান করেন।
এভাবে ২০১৮ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহােদয়ের আন্তরিক সহযােগিতায় পুনরায় বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক সম্মান সহকারে পটোকলে প্রত্যাবর্তন মুন্সিগঞ্জের, বজ্রযোগিনীতে অতীশ দীপংকর বাস্তুভিটা পরিদর্শন করে পুনরায় ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনী, মিরসরাই, ফটিকছড়ি, রাউজান, রাংগুনীয়া হয়ে জ্ঞানশরণ মহারণ্যে প্রত্যাবর্তন করেন। এরইমধ্যে পূজনীয় ভান্তে বৃহত্তর চট্টগ্রামের উত্তরে প্রায়ই বৌদ্ধপল্লীতে ধর্মপ্রচার ও বিচরণ করে সকলের মনে ধর্মবাণী ধারা উদ্বুদ্ধ ও নতুনভাবে নবজাগরণ সৃষ্টি করেন। তখন একসময় তিনি চিন্তা করেন বঙ্গীয় বৌদ্ধদের পূর্ব পুরুষ অতীতে মহাভারত হতে এদেশে বসতি সৃষ্টি করেছে। সেই বংশ পরম্পরা সৃষ্টির স্থান মহাভারত পদব্রজে দর্শনের ভাসনা সৃষ্টি হয়। সেই লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তিনি পরিকল্পনা করেন , চট্টগ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে ভারতের বিহার রাজ্যের পবিত্র বুদ্ধগয়া দর্শন করবেন।
সেই নিরিখে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি ধর্মযাত্রা শুরু করেন। গমন পথে রাউজান, বােয়ালখালী, পটিয়া, সাতকানিয়া , বান্দরবান-বমুবিলছড়ি, চকরিয়া, উখিয়া, রামু হয়ে চট্টগ্রাম মহানগর , ঢাকা , ফরিদপুর , খুলনা হয়ে যশাের যােগে ভারতে প্রবেশ করেন । যাত্রাকালে বাংলাদেশ সরকারের সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব মােঃ আসাদুজামান খান কামাল এমপি মহােদয়ের সহযােগিতায় বাংলাদেশ পুলিশ সহকারে সার্বিক নিরাপত্তা গ্রহণ করেন । এরপর যখন ভারতে প্রবেশ পথে ভারতীয় হাই কমিশনার মাননীয় রিভা গাঙ্গুলী দাশ মহােদয়ার সার্বিক সহযােগিতায় ভারতীয় পুলিশ কর্তৃক নিরাপত্ত্বায় বিহার রাজ্যের বুদ্ধগয়ায় পদার্পন করেন ২৪ মার্চ ২০১৯ইং। পবিত্র তীর্থস্থান বুদ্ধগয়ায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে পদব্রজে গমনের সংবাদ পেয়ে বুদ্ধগয়া টেম্পল ম্যানেজমেন্ট কমিটি কর্তৃক বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে সংবর্ধিত করেন । সেখানে ১৫দিন বুদ্ধপূজা ও ধর্মানুশীলনে অতিবাহিত করেন। পুনরায় স্বদেশে প্রত্যাবর্তনকালে সম্মানের সহিত ভারতীয় পুলিশ যােগে প্রেরণা করা হয়। আসার পথে কলকাতা-মধ্যমগ্রাম, আসানসোল, দুর্গাপুর, ডানকুনি, বেলুড়, মােহনপুর, নাটাগড়, টালিগঞ্জ, বিবেকনগরসহ সেখানে অবস্থানরত প্রায়ই বৌদ্ধপল্লীতে পদব্রজে গিয়ে ধর্মদান সহ সংবর্ধনা গ্রহণ করেন । পূজনীয় ভান্তে এহেন
মহৎ উদ্দেশ্যে ও মহাত্যাগময় ধর্মযাত্রাকে সাধুবাদ জানিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রাক্কালে রাজধানীতে অবস্থানরত বৌদ্ধ জনসাধারাণ এক বিশাল ধর্মসভার আয়ােজন করেন। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মানিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাসভাজন সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি মহােদয়ের উপস্থিতিতে ঢাকাবাসী বৌদ্ধ কর্তৃক সংবর্ধনা প্রদান ও ধর্মদেশনার অনুষ্ঠান ভাবগম্ভীর পরিবেশে সুসম্পন্ন হয়।
জগতে শীলবান ও কল্যাণ ধর্মপালনকারী পন্ডিত ব্যক্তিগণ যত অধিককাল বেচেঁ থাকেন ততই জনগণের হিতসুখ সাধিত হয়ে থাকে, তারা বহুজনের সুখে ও মঙ্গলের জন্য আত্মনিয়ােগ করেন । এভাবে দীর্ঘ চারমাস ভারতে পরিভ্রমণ কালে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে পরিব্রাজক জীবন অতিবাহিত করেন। সেসময় আনুমানিক সাড়ে তিন হাজার কিলােমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ভারতের তীর্থস্থান দর্শন ও এই দু'বাংলার বৌদ্ধ পল্লীতে বিভিন্ন সময়ে ধর্মদান প্রদানের এমন নজির ইতিপূর্বে বৌদ্ধ সমাজে আর কখনাে শােনা যায়নি।
সকলের মনে সম্প্রীতির বন্ধন ও স্বজাতির মধ্যে ধর্মের আলােড়ন প্রতিস্থাপিত করতে তিনি ছুটেছেন দিকে দিকে। জেনেছেন পার্থিব দুঃখ , কষ্ট , সমাজ অবক্ষয় ও এর প্রতিকার। তৎপরিক্ষিতে পূজ্য ধুতাঙ্গ সাধক ভদন্ত শরণংকর থের মহােদয়ের আদর্শ- উদ্দেশ্যগুলাে স্থাপিত করা হচ্ছে পুণ্যভূমি জ্ঞানশরণ মহারণ্যে। যেখানে রয়েছে অনাথদের অনাথালয়, শিক্ষাহীনদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। তাঁর পরিকল্পনাধীন স্থাপনাসমূহ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ধ্যানরত ১৩০ ফুট বুদ্ধপ্রতিবিম্ব, মাধ্যমিক সহ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র, হাসপাতাল, অনাথালয়, আন্তর্জাতিক মানের বৌদ্ধ জাদুঘর, আন্তর্জাতিক মেডিটেশন সেন্টার, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত ত্রিপিটক রিসার্চ সেন্টার, বিশ্বশান্তি কামনায় বুদ্ধচৈত্য, ভারতে প্রতিষ্ঠিত গৌতম বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান সমূহের আদলে চারি মহাতীর্থস্থান নির্মাণ, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতা সম্পন্ন উপগুপ্ত মহাথের প্রতিবিম্ব ও শিষ্যবর্গের ভিক্ষু ট্রেনিং সেন্টার ও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতা সম্পন্ন সীবলী মহাথের প্রতিবিম্ব। যিনি ইতিমধ্যে কয়েকটা স্থাপনা বাস্তবায়ন করে এলাকার শতাধিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থী"কে পাঠদান ও অর্ধশত শিষ্য সহকারে অবস্থান করছেন।
এই পূজ্যবর সাধকের লক্ষ্য ও মানবতাবাদী চিন্তাধারা সত্যিই বর্তমান সময়ে উক্ত স্থানে একজন অভিভাবক রূপে কাজ করে যাচ্ছেন । যাঁহার আদর্শ ও ত্যাগময় জীবন দেখে অনুপ্রাণিত এবং স্বীয় জীবন উৎসর্গিত করেছেন সেসব শিষ্যবর্গের ভবিষ্যৎ এখনাে অনিশ্চিত বয়মান। কিন্তু সকলেই ত্যাগদীপ্ত ও প্রজ্ঞাময় জীবন অন্বেষণে সর্বদা এই গহীন অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মচর্চা করে যাচ্ছেন। তথাগত বুদ্ধের সাম্য মৈত্রীর সদ্ধর্মবাণী প্রদানের মধ্যে তারা নিত্য ধর্মপ্রাণ মানুষদের সহযােগিতায় সদা তৎপর।।
এ মহান সাধকের জীবনযাত্রায় সকল কর্মপ্রচেষ্টা সিদ্ধ হােক। শাসন সদ্ধর্মের কল্যাণার্থে এমন পুণ্যপুরুষের যেন বার বার আবির্ভাব ঘটুক সর্বদা ত্রিরত্ন সকাশে প্রার্থনা জানাই ।।।।
Visit our online Site.
Gayanasarana Buddhist Monastery "পুণ্যতীর্থভূমি জ্ঞানশরণ মহারণ্য"
Ven. Saranangkar thera. Meditator & Meditation teacher...
Venerable Saranangkar International Sangha Council - VSISC

No comments:

Post a Comment